শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোট:জাতিগত সহিংসতায় উত্তপ্ত ভারতের উত্তর-পূর্বের মণিপুর রাজ্য। গত ৩ মে আদিবাসী কুকি ও সংখ্যাগুরু মেইতেই জাতির মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর সেখানে এখন পর্যন্ত ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। আটক হয়েছেন সহিংসতায় জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজন অনেকে।
‘পরিস্থিতি শান্ত’ করতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত সোমবার মণিপুর সফরে গেছেন। চারদিনের সফরে রাজ্যটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করার কথা রয়েছে তার।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে বলা হয়েছে, মেইতেই ও কুকি জনজাতির মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ইতিমধ্যেই ৭৫ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। দুই পক্ষই পরস্পরের অনেক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে গির্জা-মন্দির। ঘরছাড়া অনেকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানিয়েছেন, মণিপুরের ৩৮টি অঞ্চল স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বহু জায়গায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ভারতের সেনাবাহিনী জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে মণিপুরের ইম্ফল থেকে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, অত্যাধুনিক অস্ত্র বহনকারী কথিত সন্ত্রাসীরা সেরু ও সুগুনু এলাকায় অনেক বাড়িতে আগুন দেয়ার পর রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন সহিংসতার খবর মিলেছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গত কয়েক দিন অন্তত ‘৪০ সন্ত্রাসী’ নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষের ওপর এম-১৬, একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং স্নাইপার বন্দুক নিয়ে হামলা করছে। তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমরা সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে খুব শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা প্রায় ৪০ জন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করার খবর পেয়েছি।’
মণিপুরে প্রধানত সংখ্যাগুরু হিন্দু ধর্মানুসারী মেইতেই গোষ্ঠীকে তপশিলি উপজাতি বা এসটি তালিকাভুক্ত করার বিরোধিতা করছে প্রধানত খ্রিস্ট ধর্মানুসারী কুকিরা। গত ৩ মে ভারতের হাইকোর্ট মেইতেইদের তপশিলি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে বলার পর রাজ্যটিতে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
এসটি তালিকাভুক্ত গোষ্ঠী চাকরিতে কোটা সুবিধাসহ সরকারের নানা সংরক্ষিত সুবিধা পেয়ে থাকে। কুকিদের অভিযোগ, মণিপুরে সংখ্যাগুরু হওয়ায় এমনিতেই চাকরিসহ বিভিন্ন জায়গায় মেইতেইদের আধিপত্য বেশি। আদিবাসী বা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত সুবিধাও তাদের দেয়া হলে রাজ্যের কুকিসহ অন্য জনজাতিগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এমনকি আদালতের আদেশের কারণে মেইতেইরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত জমিও অধিগ্রহণের সুযোগ পাবে, যা জমি হারানোর ঝুঁকিতে ফেলবে নৃগোষ্ঠী বা আদিবাসীদের।